সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪১ পূর্বাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক: ভোলা বিসিকের প্লট বরাদ্ধ নিয়ে তা ভাড়ায় দেওয়া হচ্ছে বাইরের ইট বালু ও পাথর ব্যসায়ীদের কাছে। এ বিষয়ে ভোলা জেলা প্রশাসনের পক্ষে নেই কোনো কার্যকরী উদ্যোগ। বিসিক কর্মকর্তাগণের চোখের সামনে এমন কাজ চললেও ভয়ে মুখ খুলছেন না তারা। ইট ও পাথর ব্যবসায়ী বিরোধীদল ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের দাপুটে কার্যকালাপে এলাকাবাসী ও বিসিক প্রশাসন হতভম্ব।এদিকে যারা প্লট বরাদ্ধ নিয়েছেন তারা ভোলায় প্রচুর গ্যাসের মজুদ থাকলেও শিল্পনগরী বিসিকে উদ্দ্যোক্তারা গ্যাসের সংযোগ না পাওয়ায় মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন উৎপাদন প্রকৃয়া থেকে। আবার যারা শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন তারাও গ্যাস না থাকায় মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন ভোলা বিসিক থেকে। চাহিদা মতো বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে ভোগান্তি ও অবকাঠামোগত বেহাল দশায় অনেক শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বিসিকের খালি প্লটগুলো এখন গো চারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে।
বিসিক সূত্রে জানা যায়, ভোলার খেয়াঘাট সড়কের চৌমোহনী চরনোয়াবাদ এলাকায় ১৪.৪৫ একর জমির ওপর ১৯৯২ সালে বিসিক শিল্পনগরী গড়ে ওঠে। ৯৩ প্লটের মধ্যে ৭১টি প্লট বরাদ্ধ দেওয়া হয়। গ্যাস সংযোগ, চাহিদা মতো বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার আশায় প্রথমদিকে অনেকেই বিসিকে শিল্প কারখানা গড়ে তোলেন। কিন্তু গত তিন দশকেও গ্যাস পাননি উদ্যোগতারা।সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, ৭১টি প্লট বরাদ্দ নেওয়া হলেও ৯টি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয় গত তিন দশকে। কিন্তু বর্তমানে ৫টি শিল্প প্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে ৪টি শিল্পকারখানা। এতে বহু লোক কর্মসংস্থান হারিয়ে বেকার হয়ে যান। বিসিকের একটি টাইলস, মুড়ি ও পাইপ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান লাভের আশায় গড়ে উঠলেও গ্যাস না পাওয়ায় লোকসানের মুখে পড়ে। বিদ্যুৎ ব্যবহার করে পণ্য উৎপাদন করায় বহু টাকার বিল দিতে হচ্ছে।
এ ছাড়া উৎপাদনও কম হচ্ছে চাহিদা অনুযায়ী। এদিকে ভোলার শিল্প উদ্দ্যোক্তারা বলছেন, যত দিন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশে এখানে বাণিজ্যিকভাবে গ্যাস না দেওয়া হয় তত দিন শিল্পকারখানার প্রসার ঘটবে না।এদিকে দেখা যায়, বিসিকে পড়ে থাকা ফাঁকা প্লটগুলো এখন গোচারণ ভূমি হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। অপরদিকে কোনো সীমানা প্রাচীর না থাকায় প্রভাবশালীরা বিসিকের পড়ে থাকা প্লটগুলোতে বালি-পাথরের ব্যবসা করে বিসিকের রাস্তাঘাট পরিবেশের ক্ষতি করছে।
কিন্তু বিসিকের কর্মকর্তারা প্রভাবশালীদের ভয়ে মুখ খুলতেও পারছেন না।ভোলা খাদ্যগুদামের পাশে খাল থাকলেও খালে নাব্যতা সংকটে ৬০০ টনের জাহাজ না পৌঁছাতে পারায় বিসিকের মধ্য দিয়েই ঘাট করে আনলোড করা হচ্ছে শতশত টন চাল ও গম। বালুর পানিতে ও ইট পাথরের কারণে ড্রেনেজ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া রাস্তা-ঘাটগুলোতে বড় বড় গর্তসহ ভেঙে পড়েছে সকল অবকাঠামোগত ব্যবস্থা।
এ বিষয়ে ভোলা সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রন কর্মকর্তা মো: ফারুক হোসেন জানান, খাদ্য বিভাগের নিজস্ব কোনো ঘাট না থাকায় ভোলা বিসিকের মধ্যে দিয়ে তারা চাল ও গম আনলোড করে থাকেন। তাদের নিজস্ব জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হলে তারা তা অন্যত্র স্থানান্তর করে ফেলবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
এদিকে ভোলা বিসিকের উপ ব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম জানান, ভোলা বিসিকের প্রধান সমস্যা হচ্ছে বিসিকের কোনো গ্যাসের লাইন নেই। গ্যাসের জন্য তারা সুন্দরবন গ্যাস কম্পানিকে চাহিদাপত্র দিলেও এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। তবে তিনি বালু ও পাথর বাণিজ্যের বিষয়ে চুপ থাকেন।এ বিষয়ে ভোলা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম সিদ্দিকি জানিয়েছেন, বিসিকে গ্যাসসংযোগ দেওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। অচিরেই গ্যাসসংযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা হবে। সীমানা প্রাচীরও নির্মাণ করা হবে। তবে তিনি বালু বাণিজ্যের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টসহ বিভিন্ন কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বললেও তার কোনো কিছুই পরীলক্ষিত হয়নি।ব্যবসায়ী ও উদ্দ্যোগক্তারা মনে করছেন, ভোলার বিসিকে সহজ পদ্ধতিতে গ্যাসে সংযোগ দেওয়া ও সকল অবকাঠামোগত উন্নয়ন করলে দ্রুত ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বড় ধরনের শিল্প কলকারখানা গড়ে উঠবে। শতশত কলকারখানা নির্মাণ করা হবে। বেকার সমস্যা সমাধান হবে। উন্নয়নের রোল মডেলে উন্মোচিত হবে গ্যাস সমৃদ্ধ ভোলার ইতিকথা।
Leave a Reply